পদার্থবিজ্ঞানের পরিসর (Scope of Physics)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - পদার্থবিজ্ঞান - ভৌত রাশি এবং পরিমাপ (Physical Quantities and Their Measurements) | NCTB BOOK
1k
Summary

পদার্থবিজ্ঞান বিজ্ঞানশাস্ত্রের একটি মৌলিক এবং প্রাচীন শাখা, যা অন্যান্য বিজ্ঞানের শাখার ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। এটি প্রযুক্তির উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, বিশেষত ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে যা বর্তমান সভ্যতার অন্যতম প্রধান ভিত্তি। পদার্থবিজ্ঞানের প্রয়োগ যুদ্ধ, মহাকাশ অভিযান, চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই দেখা যায়।

পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সম্মিলনে নতুন শাখাগুলো গড়ে উঠেছে যেমন:

  • Astrophysics: Astronomy ও পদার্থবিজ্ঞানের সম্মিলন
  • Biophysics: জীববিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের সম্মিলন
  • Chemical Physics: রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের সম্মিলন
  • Geophysics: ভূ-তত্ত্বে পদার্থবিজ্ঞানের ব্যবহার
  • Medical Physics: চিকিৎসাবিজ্ঞানে পদার্থবিজ্ঞানের প্রয়োগ

পদার্থবিজ্ঞানের দুটি প্রধান অংশ:

  • ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞান: বলবিজ্ঞান, শব্দবিজ্ঞান, তাপবিদ্যা, বিদ্যুৎ ও চৌম্বক বিজ্ঞান, আলোক বিজ্ঞান।
  • আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান: কোরান্টাম বলবিজ্ঞান, আপেক্ষিক তত্ত্ব, পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান, কঠিন অবস্থার পদার্থবিজ্ঞান, পার্টিকেল ফিজিকস।

পদার্থবিজ্ঞান একদিনে গড়ে ওঠেনি, এটি শতাব্দীর পর শতাব্দী গবেষণা ও পরীক্ষার মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা তার চারপাশের জগতের রহস্যগুলো একাধিক সূত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন এবং এখনও সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। প্রযুক্তি উন্নয়নে পদার্থবিজ্ঞান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও, প্রযুক্তির মান ভালো-মন্দ দুই ধরনের হতে পারে, যা বোধগম্যতা দিয়ে বিচার করতে হবে।

পদার্থবিজ্ঞান যেহেতু বিজ্ঞানের প্রাচীনতম শাখা এবং সবচেয়ে মৌলিক শাখা, শুধু তাই নয় বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা কোনো না কোনোভাবে এই শাখাকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই পদার্থবিজ্ঞানের পরিসর অনেক বড়। শুধু তাই নয়, পদার্থবিজ্ঞানের নানা সূত্রকে ব্যবহার করে নানা ধরনের প্রযুক্তি গড়ে উঠেছে, সেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করি (শেষ অধ্যায়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহার করা হয় সেরকম বেশ কয়েকটি যন্ত্রের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে)। বর্তমান সভ্যতার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে ইলেকট্রনিকসের এবং এই প্রযুক্তিটি গড়ে ওঠার পেছনেও সবচেয়ে বড় অবদান পদার্থবিজ্ঞানের। দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ছাড়াও যুদ্ধের তাণ্ডবলীলা থেকে শুরু করে মহাকাশ অভিযান—এরকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই পদার্থবিজ্ঞানের ব্যবহার রয়েছে। শুধু তাই নয়,বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা এবং পদার্থবিজ্ঞানকে একত্র করে নিয়মিতভাবে নতুন নতুন শাখা গড়ে উঠেছে যেমন: Astronomy ও পদার্থবিজ্ঞান মিলে Astrophysics তৈরি হয়েছে, জৈব প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করার জন্য জীববিজ্ঞান এবং পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে Biophysics, রসায়ন শাখার সাথে পদার্থবিজ্ঞান শাখার সম্মিলনে জন্ম নিয়েছে Chemical Physics, ভূ-তত্ত্বে ব্যবহার করার জন্য 

পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে Geophysics এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে Medical Physics ইত্যাদি। কাজেই পদার্থবিজ্ঞানের পরিসর সুবিশাল এবং অনেক গভীর। পঠন-পাঠনের সুবিধার জন্য আমরা পদার্থবিজ্ঞানকে দুটি মূল অংশে ভাগ করতে পারি। সেগুলো হচ্ছে: 

ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞান: এর মাঝে রয়েছে বলবিজ্ঞান, শব্দবিজ্ঞান, তাপ এবং তাপগতি বিজ্ঞান, বিদ্যুৎ ও চৌম্বক বিজ্ঞান এবং আলোক বিজ্ঞান। 

আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান: কোরান্টাম বলবিজ্ঞান এবং আপেক্ষিক তত্ত্ব ব্যবহার করে যে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান গড়ে উঠেছে, সেগুলো হচ্ছে আণবিক ও পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান, নিউক্লির পদার্থবিজ্ঞান, কঠিন অবস্থার পদার্থবিজ্ঞান এবং পার্টিকেল ফিজিকস । 

আমরা আগেই বলেছি, পদার্থবিজ্ঞান কিংবা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাকে ব্যবহার করে পৃথিবীতে নানা ধরনের প্রযুক্তি গড়ে উঠেছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা আমাদের জীবনকে সহজ এবং অর্থপূর্ণ করে ভুলেছি, আবার কখনো কখনো ভয়ংকর কিছু প্রযুক্তি বের করে শুধু নিজের জীবন নয়, পৃথিবীর অস্তিত্বও বিপন্ন করে তুলেছি। অনেক সময় অকারণে অপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তি গড়ে তুলে পৃথিবীর সম্পদ নষ্ট করার সাথে সাথে আমাদের পরিবেশকে দূষিত করে ফেলছি। কাজেই মনে রেখো প্রযুক্তি মানেই কিন্তু ভালো নয়, পৃথিবীতে ভালো প্রযুক্তি যেরকম আছে ঠিক সেরকম খারাপ প্রযুক্তিও আছে। কোনটি ভালো এবং কোনটি খারাপ প্রযুক্তি সেটা কিন্তু তোমাদের নিজেদের বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করে বুঝতে হবে। 

পদার্থবিজ্ঞান এক দিনে গড়ে ওঠেনি, শত শত বছরে গড়ে উঠেছে। পদার্থবিজ্ঞানীরা তাঁদের চারপাশের রহস্যময় জগৎকে দেখে প্রথমে কোনো একটা সূত্র দিয়ে সেটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে সেই সূত্রকে কখনো গ্রহণ করা হয়েছে, কখনো পরিবর্তন করা হয়েছে, আবার কখনো পরিত্যাগ করা হয়েছে। এভাবে আমরা পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা থেকে শুরু করে মহাবিশ্বের বৃহত্তম আকার পর্যন্ত ব্যাখ্যা করতে শিখেছি। এই শেখাটা হয়তো এখনো পূর্ণাঙ্গ নয়—বিজ্ঞানীরা সেটাকে পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, যেন কোনো একদিন অভ্যন্ত অল্প কিছু সূত্র দিয়ে আপাতদৃষ্টিতে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের সবকিছু ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়ে যাবে। 

Content updated By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...